গান বাজনা ও অপসংস্কৃতি প্রসংগে

Posted Posted by আরিফ in Comments 0 comments

                                                           মাওলানা আব্দুস সালাম সুনামগন্জী
এ যুগে চিত্ত বিনোদনের নামে গান-বাজনা অহরহ চলছে। জাতীয় প্রচারমাধ্যমে প্রত্যহ গান বাজনা হচ্ছে। সংস্কৃতির নামে এ অপসংস্কৃতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল এ বাংলাদেশে চিত্তবিনোদনের প্রধান উপায় হিসাবে অবলম্বন করা হয়েছে গান-বাজনাকে। এ দেশে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান থাকা সত্ত্বেও আমরা কি একবার চিন্ত্মা করে দেখেছি যে, চিত্তবিনোদনের নামে গান-বাজনা কি ইসলামের বিধান সম্মত? গান বাজনা সংস্কৃতি নাকি অপসংস্কৃতি আমরা কি তা চিন্ত্মা ভাবনা করছি। ইসলাম ধর্মে নাটক, সিনেমা, দেহপসারিণীদের খেল তামাশা থিয়েটার, সার্কাস, ভেল্কিবাজি ও সর্বপ্রকার নাচ,গান-বাজনা হারাম। ইসলামী রাষ্ট্রনায়কের কর্তব্য হচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি বন্ধ করে দেয়ার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহন করা। কারণ এসবের মাধ্যমে অনৈতিকথার বিস্ত্মার ঘটে। নিন্দিত পুঁজিবাদ ও মাথাচাড়া দেয়। সর্ব সাধারণের জন্য অভাব ও দারিদ্রের দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে যায়। সরকারের পথেকে যদি এসব অপসংস্কৃতি বন্ধের দ্রম্নত উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে জনসাধারণের জীবনোপায় সংগ্রহের দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। এবং দেশে অভাব ও দারিদ্রের সেই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে। যার ফলে মানুষের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে এবং জাতীয় জীবনে ব্যাপক ভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়বে। যার বাস্ত্মব রূপ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ইসলামী শাসকবর্গের পে বিশেষ ভাবে এবং সাধারণ মুসলমানদের পে সাধারণভাবে এসব বন্ধ করার চেষ্টা চালানো জরম্নরী। গান-বাজনা ইত্যাদি হারাম হওয়ার ব্যাপারে সংপ্তি কয়েকটি দলীল উল্যেখ করা হচ্ছে।
কুরআন থেকে দলীলঃ-
কুরআনে কারীমে আলস্নাহ তা'আলা ইরশাদ করেন - "অর্থাৎ আর কতক লোক এমন রয়েছে যারা অজ্ঞতাবশত মানুষকে আলস্নাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট বা ভ্রান্ত্ম করার জন্য বাদ্যকে ক্রয়/অবলম্বন করে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রোপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্ত্মি।''(সূরা লোকমান-৬) এ আয়াতে ''লাহওয়াল হাদীস'' দ্বারা উদ্দেশ্য হল ''গান-বাদ্য''। এ সম্পর্কে ইবনে আবি শাইবা, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির এবং হাকীম ও বায়হাকী সহীহ সনদে আবুস সাহবা থেকে বর্ণনা করেন অর্থাৎ তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুলস্নাহ ইবনে মাসউদ (রা.) কে কুরআনের উক্ত আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি (আব্দুলস্নাহ ইবনে মাসউদ রা.) বলেছেন, আলস্নাহর কসম, গান-বাদ্যই হল ''লাহওয়াল হাদীস''ও করেছেন। তিনি বলেছেন '' লাহওয়াল হাদীস'' হল গান এবং গান জাতীয় ক্রীড়া-কৌতুক। (তাফসিরে রম্নহুল মা'আনী ১১/৬৭) অন্যান্য মুফাস্‌সিরীনে কেরাম ও উক্ত আয়াতের এ ব্যাখ্যাই প্রদান করেছেন। সুতরাং এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে গান-বাদ্য হারাম।
আলস্নাহপাক অন্য স্থানে ইরশাদ করেন- "অর্থাৎ আলস্নাহ তাআলা শয়তানকে ল্য করে বলেছিলেন, 'তুই তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস ''তোর আওয়াজ'' দ্বারা সত্যচ্যুত কর'
 (সুরা বনী ইসরাইল-৫৪)।(রহ.) শয়তানের আওয়াজ এর ব্যাখ্যা করেছেন গান-বাদ্য ও অনর্থক ক্রীড়া কৌতুক দ্বারা (তাফসীরে রম্নহুল মাআনী ৮/৬৭ )সুতরাং গান-বাদ্য শয়তানের আওয়াজ তা কখনো শরীয়তে বৈধ হতে পারে না।
কুরআন পাকের অনেক স্থানে আলস্নাহ তাআলা ইরশাদ করেন- "অর্থাৎ তোমরা কি এই বিষয়ে (কুরআনে করীমে) আশ্চর্যবোধ করছ? অস্বীকার করছ? এবং হাসছ ঠাট্রা স্বরম্নপ? ক্রন্দন করছনা নিজেদের সীমা লংঘনের কারণে? আর তোমরা ক্রীড়া কৌতুক করছ? তথা গান-বাদ্য বাজিয়ে মানুষকে কুরআন থেকে বিমুখ করছ?" (সূরা নজম ৫৯-৬১)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু উবায়দা বলেন, হিময়ারীদের পরিভাষা অনুযায়ী 'আসসামুদ' হল গান-বাদ্য। তাফসীরে রুহুল মাআনী ১৪/৬৭, ইবনে আব্বাস (রা.) ও সামুদ এর অনুরম্নপ ব্যাখ্যা করেছেন।
হাদীস থেকে দলীল:-
গান-বাদ্যের নিষিদ্ধতা ও অসারতার উপর অসংখ্য হাদীস বর্ণিত রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হাদীস নিম্নে পেশ করা হল।
হযরত আবু মালিক/আবু আমের আশআরী রা. মারফুআন বর্ণনা করেন- অর্থাৎ আমার উম্মতের মাঝে এমন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে যারা ব্যভিচার,রেশম, সুদ, এবং গান-বাদ্যকে হালাল মনে করবে। (বুখারী শরীফ২/৮৩৭)
সুনানের মাঝে হযরত আব্দুলস্নাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (স:) ইরশাদ করেন, গান-বাদ্য মানুষের অন্ত্মরে নেফাক্ব উৎপন্ন করে। যেমনি ভাবে পানি যমীনে শষ্যাদি উৎপন্ন করে।
হযরত আবু উমর রা.থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (স:) ইরশাদ করেন, যখনই কেউ গান শুরম্ন করে তখনই আলস্নাহ ত'াআলা তার নিকট দুই শয়তান প্রেরন করেন। শয়তানদ্বয় তার কাঁধের উপর আরোহন করে পা দ্বারা তার বে আঘাত করতে থাকে, যতণ না সে গান থেকে বিরত হয়।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত নবী করীম (স:) ইরশাদ করেন এ উম্মতের মাঝে ভূমিধ্বস চেহারার বিকৃতি ও প্রস্ত্মর বর্ষণ হবে। তখন জনৈক সাহাবা প্রশ্ন করলেন হে আলস্নাহর রাসুল! কখন এমনটি হবে? উত্তরে নবী (স:) বললেন যখন তাদের মাঝে গায়িকা, বাদ্যযন্ত্র এবং মধ্যপানের প্রবর্তন ঘটবে। (তিরমিযী শরীফ২/৫৪)
সুনানে ইবনে মাযাহ শরীফে হযরত সাফওয়ান ইবনে উমাইয়্যা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমরা একবার রাসূলে মাকবুল (সা:) এর মজলিসে ছিলাম, তখন আমর ইবনে কুররাহ হাযির হয়ে আরজ করতে লাগল, ইয়া রাসূলুলস্নাহ! আলস্নাহ আমাকে দরিদ্র ও হতভাগা বানিয়েছেন। একটি উপায় ব্যতীত আমার জন্য জীবনোপায় সংগ্রহের সকল দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে আমি দফ বাজিয়ে এবং গান গেয়ে যা কিছু উপার্জন করি। ইয়া রাসুলালস্নাহ আপনি আমাকে গান-বাজনার অনুমতি দিন। আমি গান-বাজনাকে কোন অশস্নীলতায় ব্যবহার করবনা। রাসূল (স:) জবাবে ইরশাদ করলেন, আমি কোন ক্রমেই এর অনুমতি দেবনা। হে আলস্নাহর দুশমন তুমি মিথ্যা বলছ! নিশ্চয় আলস্নাহ তাআলা তোমার জন্য হালালের দরজা উন্মুক্ত রেখেছেন। যেভাবে তার সাধারন সৃষ্টিজীবের জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন। তুমি নিজেই হালাল ত্যাগ করে হারামকে অবলম্বন করেছ। তুমি আমার মজলিস থেকে চলে যাও, আলস্নাহর দরবারে তওবা কর, এবং সাবধান হয়ে যাও। তুমি যদি আবার কখনো এ কাজ কর, তাহলে আমি তোমাকে কঠিন ও মর্মান্ত্মিক শাস্ত্মি দেব। শহর থেকে বের করে দেব অথবা জেলখানায় আটক করে রাখব এবং মদীনার শ্রোতাদের জন্য তোমার ধন-সম্পদ লুট করা বৈধ করে দেব। (ইবনে মাযাহ ১৮৭ পৃষ্ঠা)
এ হাদীস হতে আমাদের সামনে ৩টি বিষয় বেরিয়ে আসে-
এক.গান-বাজনাকে জীবিকা সংগ্রহের উপায় সাব্যস্ত্ম করা হারাম ও কবীরা গোনাহ। যেহেতু এর মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক জীবন ধ্বংস ও বিনাশ হয়ে যায়। এবং ব্যাপক অনৈতিকতার জন্ম হয়। এ জন্য হযরত রাসুলে করীম (সা:) আমর ইবনে কুররাহকে আলস্নাহর দুশমন বলে অবহিত করেছেন এবং তুচ্ছতাজ্ঞাপক শব্দ দিয়ে তাকে সম্বোধন করেছেন।
দুই. এধরনের অর্থনৈতিক জীবন যাপনকারীদের সাথে অত্যন্ত কঠোর তা'যীর শাস্ত্মি মূলক আচরন করা ইসলামী শাসকদের পে জরম্নরী। যাতে অবৈধ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মুলোচ্ছেদ ঘটে এবং কল্যাণকর বৈধ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়।
তিন. গান-বাজনা অপসংস্কৃতি তা সর্বেেত্রই হারাম। বিবাহ-শাদী, বা ওয়ালীমা অনুষ্ঠানেই হোক কিংবা অন্য কোন অনুষ্ঠানে হোক। পীর সাহেবের মাযারে হোক বা স্বাধীনতার উৎসবে হোক। যিকিরের নামে হোক বা উরম্নসের নামে হোক। মারেফতী,কাওয়ালী, মুরশীদি'র নামে হোক বা বাউল গানের নামেই হোক।
ফেকাহ ফতোয়া থেকে দলীলঃ-
ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়ায় রয়েছে,জেনে রাখ,গান সকল ধর্মেই হারাম।
*গান অন্ত্মরে কামোদ্দীপনা জাগ্রত করে যৌন সুড়সুড়িমুলক আবেদন সৃষ্টি করে।একারনেই গানকে যিনার মন্ত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়।আলস্নামা তাহের পাঠনী বলেন একারনেই বলা হয় অর্থাৎ গান যেনার মন্ত্র।দুররম্নল মাআরিফ গ্রন্থে বলা হয়েছে অর্থাৎ গান হারাম হওয়ার ব্যাপারে উলামাদের মাঝে কোন মতানৈক্য নেই।(ভ্রান্ত্ম মতবাদ)
*গান বাদ্যের আওয়াজ শুনা পাপ এবং সেই সব বৈঠকে বসা ফাসিকী এবং উহা থেকে স্বাদ উপভোগ করা উলস্নাস করা ও আনন্দ করা কুফরী(বায়যাবিয়া ফাতাওয়ায়ে শামী ৬ষ্ঠ খন্ড ৩৪৮-৩৪৯ পৃষ্টা)
সামা' ও সর্বসম্মত হারামঃ-
(০) সাম্প্রতিক কালের বাস্ত্মব অবস্থা হল বে-শরা ফকীরের গান-বাদ্য ও নারী সমন্বিত নাচ-গানের আসরকে বুযুর্গানে দ্বীন কর্তৃক চর্চিত সামা' বলে চালিয়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত্ম করছে এবং এই সামা'কে তারা ইবাদত ও আলাহর নৈকট্য লাভের উপায় বলে মনে করছে। এভাবে তারা একদিকে বুযুর্গদের প্রতি মিথ্যা নেছবত প্রদান করে চলেছে। অপরদিকে তারা দ্বিগুণ পাপে জর্জরিত হচ্ছে। প্রথমত: হারাম কাজ করার পাপ, দ্বিতীয়ত সেই হারাম কাজকে ইবাদত মনে করার পাপ। সুতরাং বর্তমান যুগের প্রচলিত সামা' সর্বশ্রেণীর উলামায়ে কেরামের মতে সন্দেহাতীত ভাবেই হারাম এবং কবীরা গুনাহ। (০) আলস্নামা ইবনুস সালাহ তার ফতওয়ায় দীর্ঘ আলোচনার পর বলেন "মুসলমানদের সকল ইমামের সর্বসম্মত মতে এই সামা' হারাম।"(তাফরীরে রম্নহুল মাআনী ১১/৬৯) ০ ফতওয়ায়ে শামীতে দীর্ঘ আলোচনার পর বলেন সামা' এ যুগে বৈধ নয়। (ফা:শামী.৬/৩৪৯)
বাউলদের আকীদা বিশ্বাস কুফরী এবং বাউলগান কুফরী:-
এ সম্প্রদায়ের প্রবর্তক বে-শরা ফকীর বা চৈতন্যদেব বা আ্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌উল চাঁদ। বিস্ত্মরিত অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাউলগণ নির্দিষ্টভাবে হিন্দু বা মুসলিম কোন সম্প্রদায়েরই আচার-আচরণ বা দর্শনের অনুসারী নয়। বরং বাউলদের অনেকগুলি নিজস্য বিশেষ দর্শন রয়েছে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকটি দর্শন ও ইসলামের দৃষ্টিতে যে সম্বন্ধে সংপ্তি পর্যালোচনা পেশ করা হল।
(১) চারচন্দ্র ভেদতত্ত্ব: ''চারচন্দ্র'' বলতে বোঝায় শুক্র, রজ:বিষ্ঠা ও মুত্র। বাউলদের মতে সিদ্ধি অর্জন করার জন্য এই চারচন্দ্র সাধনার গুরম্নত্ব অপরিসীম। বাউলদের দাবী হল চারচন্দ্র সাধনায় কামজয় হয়। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা যোগে বাউলগণ প্রকৃতি আশ্রয়ী হয়ে সাধনা করতে গিয়ে তারা পানক্রিয়া অনুষ্ঠান করে এ সবপান করে থাকে। ভণ করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মল, মুত্র, মনী বা বীর্য ও ঋতুস্রাব এসব ভণ করা হারাম। অতএব হারামকে যারা হালাল মনে করে তাদের ঈমান থাকেনা। আর হারাম উপায়ে কৃত কোন সাধনা ইসলামে স্বীকৃত ও কাম্য নয়।
উলেস্নখ্য বাউলগণ শুক্র বা বীজকে ঈশ্বর আখ্যায়িত করে থাকেন।
বীজকে ঈশ্বর আখ্যায়িত করে বাউলগণ আলাহর পরিচয়কে বিকৃত করেছেন। এরূপ ব্যাখ্যা ও পরিচয়ে আলাহকে বিশ্বাস করা অবিশ্বাস করারই নামান্ত্মর। এ দৃষ্টিকোণ থেকেও বাউল দর্শন একটি ইসলাম বিবর্জিত ও ঈমান পরিপন্থী দর্শন।
(২) মনের মানুষ তত্ত্ব:
বাউলগণ আলস্নাহ, অচিনপাখী, মনের মানুষ, আলেকসাঁই ইত্যাদিকেসমার্থবোধক মনে করে থাকেন। আত্ম সন্ধানের মাধ্যমে তাদের এই কথিত ''মনের মানুষ'' তথা খোদাকে সন্ধানই তাদের প্রধান ল্য। তাদের কথিত ''মনের মানুষ'' এর কি অর্থ তা নিয়ে বাউল গবেষকদের মধ্যে প্রচুর মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল অন্ত্মরাস্থত নূর, যে নূর দ্বারা মুহাম্মদকে তৈরী করা হয়েছিল অর্থাৎ এর দ্বারা নূরে মোহাম্মদীকে বোঝানো হয়েছে। এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী মনের মানুষকে সন্ধান করা আলস্নাহকে সন্ধান করার নামান্ত্মর নয়। কেউ কেউ বলেন ''মনের মানুষ'' দ্বারা আলস্নাহকে বোঝানো হয়েছে। কেননা আলস্নাহ মানুষের অন্ত্মরে সমাহিত হয়ে থাকেন। যা হোক এভাবে বাউলগণ আলস্নাহর পরিচয়কে অস্পষ্ট করে তুলেছেন।
ইসলামী আকীদা মতে নূরে মুহাম্মদী আর আলস্নাহ সমার্থবোধক নয়। তাছাড়া আলস্নাহ কোন মনের মানুষ নন। তিনি সমস্ত্ম উত্তম গুণাবলীর আধার এক সত্তা। তার স্বতন্ত্র অস্ত্মিত্ব বিরাজমান। তিনি কোন মানুষের অন্ত্মরে অবস্থান গ্রহণ করেন না। তিনি স্থান ও কালের উর্ব্ধে। অতএব বাউল কথিত মনের মানুষকে সন্ধান করা আদৌ আলস্নাহকে সন্ধান করার সমান্ত্মরাল নয়। তাই ইহাও কুফরী দর্শন।
৩।: বাউলগণের ধারণায় আলাহ ও রাসূলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যিনি আলাহ তিনিই রাসূল। এ প্রসঙ্গেঁ বাউল শ্রেষ্ঠ লালন বলেন।
আহাদে আহমদ নাম হয় জগতে=আত্মতত্ত্বে ফাজিল যে জনা, জানতে পায় নিগুঢ় কারখানা= হল রছুল রূপে প্রকাশ রব্বানা। ইসলামের দৃষ্টিতে এই মতবাদটি ও কুফরী।
৪: বাউলদের একটি প্রসিদ্ধ তত্ত্ব হল মুবশিদ তত্ত্ব। একে পীরতত্ত্ব বা গুরম্নতত্ত্ব ও বলা হয়। তারা আলস্নাহ ও রাসূলের মধ্যে যেমন পার্থক্য করেনা, তদ্রম্নপ আলস্নাহ ও মুর্শিদের মধ্যেও কোন পার্থক্য করেনা। এ প্রসঙ্গেঁ তাদের প্রসিদ্ধ উক্তিটি উলেস্নখ্য "যেহি মুরশিদ সেহি খোদা"। লালন (মুর্শিদকে ল্য করে) বলেন:-
মোরশেদ বিনে কি ধন আর আছেরে এ জগতে
মোরশেদের চরণ সুধা-পান করলে হবে ুধা
করনা আর দেলে দ্বিধা যেহি মোরশেদ সেহি খোদা।।
ইসলামের দৃষ্টিতে এই তত্ত্ব ও কুফরী।
৫।''বাংলার বাউল দর্শন'' গ্রন্থে বলা হয়েছে বাউল ধর্মের ল্য হল সর্বধর্মের যার সমন্বয় সাধন। সর্বধর্মের মূল ল্য আত্মার মুক্তি। আত্মার মুক্তি বা মোলাভের মূল বাণী সমূহ ও মতাদর্শের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে বাউল মতবাদ।
আলস্নাহর নিকট ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়। ইরশাদ হয়েছে অর্থাৎ "ইসলাম ব্যতীত যে অন্য ধর্ম সন্ধান করবে, আদৌ তার থেকে তা কবুল করা হবেনা এবং সে পরকালে তিগ্রস্ত্মদের অন্ত্মর্ভূক্ত হবে"। (সূরা আল-ইমরান- ৮৫)
অতএব সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রচেষ্টা একটি কুফরী মতবাদ।
(৬) ওহী ভিত্তিক ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থাকে অস্বীকার: বাউলরা ঐশী শাস্ত্র বা জিব্রাঈল মারফত কোন নবীর উপর প্রত্যাদিষ্ট শাস্ত্র ভিত্তিক কোন ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থা মানেনা। কারণ এ সবের ভিত্তি হল চেতনা। বাউলরা সাম্প্রদায়িক ধর্মও দল চেতনা স্বীকার করেনা। তারা দেশ, জাত, বর্ণ, ধর্ম নির্র্বেশেষে কেবল মানুষকে জানতে, মানতে ও শ্রদ্ধা জানাতে চায়। মানুষের ভিতর মনের মানুষকে খুঁজে পেতে চায়। (বাংলার বাউল দর্শন)
বাউলগণ তাদের কথিত সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রচেষ্টা থেকেই ওহী ভিত্তিক ধর্মকে অস্বীকার করেছেন। এরূপ আকীদা বিশ্বাস নি:সন্দেহে কুফরী।
(৭) সঙ্গীত সাধনা: সঙ্গীত বাউলদের সাধনার প্রধান অঙ্গঁ। বাউলদের গানগুলো "মারফতী বা মুর্শিদী" গান নামে অভিহিত হয়। উত্তর বঙ্গেঁ সাধনারত: দেহতত্বের গান নামে এবং পশ্চিমবঙ্গেঁ বাউল গান নামে পরিচিত। (ভ্রান্ত্ম মতবাদ)
পূর্বে বিস্ত্মারিত আলোচনা করা হয়েছে গান যে কোন নামেই হোকনা কেন তা হারাম।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী ! ইসলামী শরীয়ত ও নবীর আদর্শের মধ্যেই মুক্তি নিহিত। অন্য কোন পন্থায় মুক্তি নেই। তাই সর্ব প্রকার পাপ ও হারাম কাজ থেকে তওবা করে পরিপূর্ণ দ্বীন মানার ও রাসূল(সা:) এর আদর্শ মত জীবন গড়ার চেষ্টা করম্নন। মদ, জোয়া, নেশাপান, ইভটিজিং, ব্যভিচার, ধর্ষন, সুদ, ঘুষ, যৌতুক, ছিনতাই, নাচ-গান, অশস্নীলতা ইত্যাদি সর্বপ্রকার অপকর্ম থেকে নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করম্নন। সামাজিকভাবে তা প্রতিহত করার জন্য গণসচেতনতা গড়ে তুলুন। আয় আলাহ আমাদেরকে সে তাওফিক দান কর।

লেখক, কলামিষ্ঠ, গ্রন্থকার
শিক্ষক, জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার, সিলেট
Your Ad Here

0 comments:

Post a Comment