প্রসঙ্গ :যৌন নির্যাতন

Posted Posted by আরিফ in , , Comments 0 comments

                                                               আব্দুস্ সালাম সুনামগঞ্জী
 বর্তমানে বাংলাদেশে ইভটিজিং একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পত্রিকার দিকে দৃষ্টি দিলেই বাংলাদেশের কোন না কোন এলাকায় ইভটিজিং এর খবর পাওয়া যায়৷ এটা প্রতিরোধ করতে হলে কয়েক শ্রেণীর লোককে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে  পালন করতে হবে৷ যেমন: মাতা - পিতা বা অভিভাবকের দায়িত্ব, নারীদের দায়িত্ব, সরকারের দায়িত্ব৷ কার কি দায়িত্ব তা নিন্মে পেশ করা হচ্ছে-
মাতা-পিতা বা অভিবাকের দায়িত্ব :- ছেলে মেয়ে লেখা পড়ার উপযুক্ত হলে তাদের কে ইসলামী আদর্শ শিক্ষা দেওয়া পিতা মাতার দায়িত্ব৷ কমপ েকালেমা, নামায, রোজা, পর্দা-পুশিদা, হালাল-হারাম, জায়েজ-নাজায়েজ ইত্যাদি৷ একজন মুসলমানের জন্য যা জানা আবশ্যকীয় তা শিা দেওয়া ও আবশ্যকীয়৷ নতুবা কাল কি্বয়ামতে জবাবদিহি করতে হবে৷
* মেয়েরা যখন ৯/১০ বত্‍সরে উপনীত হয় তখন থেকেই তাদের কে এমন পোষাক পরাতে হবে যাতে সমসত্ম অঙ্গ ঢেকে থাকে৷ যেমন- সেলোয়ার, ফুলহাতা কামিজ ও ওড়না৷ যখন বারো বত্‍সরে উপনীত হয় তখন তাদের কে আবশ্যকী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ীর বাইরে যেতে না দেওয়া৷ হ্যা, যদি একানত্ম যেতেই হয় তাহলে বোরকা পরে বের হওয়ার শিা দেওয়া৷ কেননা, মেয়েদেরকে পর্দায় রাখা পিতা মাতার কর্তব্য এবং পিতামাতাকেই খেয়াল রাখতে হয় যেন তাদের সনত্মান কোন পর পুরম্নষের সাথে কথাবর্তা বলার সুযোগ না পায়৷ 
বর্তমানে মাতা পিতা বা অভিভাবকদের অলসতা দ্বারাই ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে মেয়েরা ৷ কেননা, তাদের কে শরয়ী পর্দা শরয়ী লেবাসে গড়া হয়নি৷ ফলে তারা এমন পোষাক পরিধান করে চলাফেরা করে যে, তাদের অনেক অঙ্গই খোলা থাকে৷ কামিজের হাত উঠাতে উঠাতে বগল পর্যনত্ম পেঁৗছে গেছে, মাথাও থাকে খোলা৷ অনেকে এমন পাতলা
ও টাইট পোষাক পরিধান করে যে তাদের অঙ্গগুলো ভেসে থাকে ৷ তাই ছেলেদের দৃষ্টি পড়ে ও লোভ লাগে৷ মেয়েরা বা নারীরা হলো আগুন স্বরূপ এবং ছেলেরা হলো মোম স্বরূপ৷ আগুনের ছুঁয়া পেলে যেভাবে মোম গলতে থাকে তদ্রম্নপ মেয়ে/ নারীদের দেখা মাত্র ছেলেরা ও গলতে থাকে (তথা উত্তেজনা বৃদ্ধি হতে থাকে)৷ তাই ইসলামের বিধান হল পর্দা পালন ফরজ৷ মেয়ে বা নারীদের জন্য নিজের অঙ্গ প্রকাশ করা হারাম এবং ছেলেদের জন্য বেগানা নারীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম ৷
আলস্নাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ''পুরম্নষগণ! তোমরা তাদের কে (নারীগনকে) তাদের ঘর হতে (বাড়ীহতে ) বের করে দিও না এবং তারা নিজেরা ও যেন বের না হয়" ( সূরা ত্বালাক-১)৷
পিতামাতা ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদেরকে ইসলামী অনুশাসনের আদর্শমত ইসলামী পোষাক পরিধানের অভ্যাস না করানোর কারনে মেয়েরা আজ অশালীন ভাবে, অর্ধ উলঙ্গ ভাবে চলাফেরা করে, স্কুল কলেজ, মার্কেটে যাতায়াত করে৷ তাই তারা  ছেলেদের দৃষ্টি কেড়ে নেয় আর ইভটিজিং এর শিকার হয়; ধর্ষনের শিকার হয়৷ এর জন্য দায়ী পিতা মাতা ও অভিভাবকগণ৷
* এমনি ভাবে পিতা-মাতার দায়ীত্ব হল নিজের ছেলেকে শিতি করা৷ কমপ েতার মধ্যে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার যোগ্যতা তৈরী করা৷ আপনার ছেলে যদি আদর্শবান হয় তাহলে সে অন্য কোন নারীর প্রতি কুদৃষ্টি করবেনা এবং ইভটিজিং করবেনা৷ বখাটেরাই ইভটিজিং করে থাকে৷
* পিতা মাতার আরো একটি দায়ীত্ব হলো ছেলেমেয়ে বিবাহের উপযুক্ত হলে যতটুকু সম্ভব তাদের চাহিদামত পাত্র/পাত্রী দেখে বিবাহ দেওয়া ৷ বিবাহ দেওয়ার পূর্ব পর্যনত্ম কড়া দৃষ্ঠি রাখা, যাতে কোন অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়ে৷ পর্দাহীন নারীরাই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে৷ পর্দাহীন নারীরাই অবৈধ সম্পর্ক করার সুযোগ দেয় এবং বখাটে ছেলেরাই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে৷
* বর্তমানে পিতা-মাতা অভিভাবকদের আরো একটি দায়িত্ব হলো যুবক ছেলে মেয়েকে বিবাহের পূর্ব পর্যনত্ম
মোবাইলফোন হাতে তুলে না দেওয়া৷ মোবাইল দ্বারা লেখা-পড়ার মারাত্নক তি হয় এবং এর মাধ্যমেই প্রেম ও অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে৷
অতএব পিতা-মাতা, অভিভাবকগন নিজেদের দায়ীত্ব যথাযথভাবে পালন করলে ইভটিজিং বন্ধ হয়ে যাবে৷

নারীদের দায়ীত্ব:- একজন মেয়েকে বুঝতে হবে আলস্নাহপাক আমাকে মেয়ে করে সৃষ্টি করেছেন , তাই আমাকে মা হতে হবে৷ আর মা হতে হলে আদর্শ মা হতে হবে৷ আর আদর্শ মা হতে হলে ইসলামী বিধান মত আমার চলতে হবে৷  নিজেকে ছোটবেলা থেকেই গড়ে তুলতে হবে৷ কুরআন হাদীস শিা করে সে অনুযায়ী চলতে হবে৷ শরয়ী পর্দা মেনে আমায় চলতে হবে ৷ নারীদের জন্য কোন বেগানা পুরম্নষের সামনে বের হওয়া দেখা সাাত করা, কথাবার্তা বলা বৈধ নয়৷ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ী থেকে বের না হওয়া জরম্নরী, কেননা নারীদের মাথা থেকে পা পর্যনত্ম পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা ফরজ৷ বেগানা কোন পুরম্নষের সামনে নিজের অঙ্গ প্রকাশ না করা  এবং অঙ্গ প্রকাশ  করে চলাফিরা না করা৷
আলস্নাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ''তোমরা, হে নারীগণ! তোমাদের ঘরের (বাড়ীর চতুর সীমানার) ভিতর অবস্থান করো এবং বাড়ীর বাইরে বের হয়োনা যেমন ইসলামপূর্ব মুর্খতা যুগের মেয়েরা বের হতো, নিজেদের কে প্রদর্শন করত" (সূরা আহযাব-৩৪)৷
অন্যত্র ইরশাদ করেন ''হে নবী! আপনি আপনার পতি্নগনকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, যখন প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয়, তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়৷ ফলে তাদের কে উত্যক্ত করা হবেনা৷ আলস্নাহ্ মাশীল পরম দয়ালু" (সূরা আহযাব-৫৯)৷

উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বর্ণনা করেন এ আয়াত নাযিল হবার পর যখন একানত্ম প্রয়োজনে মুসলিম মহিলাগণ ঘর থেকে বাইরে যেতেন, তখন মাথা থেকে পা পর্যনত্ম সর্বাঙ্গ এভাবে ঢেকে রাখতেন যে, তাঁদের দুটি চুখ ব্যতীত অন্য কিছুই দেখা যেত না, আজকের এই অশান্ত পৃথিবীতেও মহিলাদের কর্তব্য হলো, নিজেকে ঢেকে রাখা এবং নিতান্তপ্রয়োজনে বাইরে গেলেও নিজেদের সম্মান এবং মর্যাদা রার ব্যাপারে সজাগ, সতর্ক এবং সাবধান থাকা৷উক্ত আয়াতের উপর তথা পর্দা বিধানের উপর আমল করা হলে ইভ্টিজিং তথা উত্ত্যক্ত করা বন্ধ হয়ে যাবে৷ সমাজ ও জাতীয় জীবনে শানত্মি শৃংখলা ফিরে আসতে পারে৷ স্মরণ রাখা দরকার পর্দাহীনতাই অবশেষে বেহায়াপনার কারণ হয় আর সে বেহায়াপনাই ইভটিজিং ও অশস্নীলতার কারণে পরিণত হয় যাতে ধর্ষণ ও ব্যাভিচারের মত জঘন্য পাপ সংগঠিত হয় আর সেই পাপ আলস্নাহর গজবকে ডেকে আনে৷সুতরাং নারীরা তাদের দায়ীত্ব/কর্তব্য যথাযথ ভাবে পালন করলে ইভটিজিং বন্ধ হয়ে যাবে৷
সরকারের দায়িত:- এদেশের নারী পুরুষ সবাই সরকারের আইনের অধীনস্থ৷ সবশ্রেণীর জনগণের জান, মাল, সম্মানের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের৷ মেয়ে/নারীদের মান মর্যাদা, সম্ভ্রম যাতে হেফাজত থাকে তার প্রতি দৃষ্টি রাখা ও সরকারের দায়িত্ব৷ রাজার রাজা আলস্নাহ পাক যখন নারীদের নিরাপত্তার জন্য পর্দা ফরয করে দিয়েছেন তখন সরকারের দায়ীত্ব হল আলস্নাহ পাকের দেয়া সেই পর্দা বিধানকে সরকারী ভাবে জারী করা৷ অথচ দেখা যাচ্ছে বর্তমানে সরকারের লোক পর্দা বিধানকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে৷ যার ফলে  ইভটিজিং ব্যাধি মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷
 অথচ আল্লাহপাক ইভটিজিং বন্ধ করার জন্য পর্দার আইন নাজিল করেছেন এবং ধর্ষন ও ব্যাভিচার বন্ধ করার জন্য ব্যভিচারের শাসত্মির আইন নাজিল করেছেন৷ আর তা হলো ''ব্যাভিচারী নারী পুরম্নষ অবিবাহিত হলে উভয়ের প্রত্যেককে বেত্রাগাত করা, আর বিবাহিত হলে 'রজম' অর্থাত্‍ পাথর নিপে করে তাদেরকে মেরে ফেলা৷ (সূরা নূর :২)   

অতএব,সরকার আল্লাহর বিধান সম্বলিত আইনকে বাসত্মবায়ন করে নিজ দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করলে ইভটিজিং বন্ধ হয়ে যাবে,ধর্ষন ও ব্যাভিচার বন্ধ হয়ে যাবে৷ যে সমস্থ কাজ কর্মে যুবক যুবতীদের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় তাও বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব৷ যেমন অশিস্নল সিনেমা, বিদেশী চ্যানেল,ভিসি আর, পর্ণোগ্রাফী ইত্যাদি৷ সচেতন নাগরিক ও আদর্শবান নাগরিক গড়ে তোলা সরকারের দায়িত্ব৷ সচেতন ও আদর্শবান নাগরিক গড়ে তোলার জন্য ইসলামী শিার বিকল্প নেই৷ শিাই জাতির মেরম্নদন্ড৷ সুতরাং সরকারীভাবে ইসলামী শিার গুরুত্ব দিতে হবে৷ সাথে সাথে সহশিা ব্যবস্থা পরিবর্তন করে নারীদের জন্য পৃথক শিার ব্যবস্থা করতে হবে৷ এমনি ভাবে অফিস আদালতসহ বিভিন্ন কর্মেেত্র শুধু পুরম্নষদেরকেই নিয়োগ করা প্রয়োজন৷ মহিলাদেরকে বিনা শ্রমে ঘরে রেখে সরকারী ভাবে ভাতা চালু করা সরকারের দায়িত্ব৷ সুতরাং সরকার তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে আদর্শ সমাজ গড়ে উঠবে৷ আদর্শবান মা-বোন, ছেলেমেয়ে গড়ে উঠবে৷ ইভটিজিং , ধর্ষন, ব্যাভিচার ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যাবে৷ আসুন আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি৷
আল্লাহকে ভয় করি৷ আমরা যা ই  করি না কেন আল্লাহ পাক আমাদেরকে দেখতেছেন ৷ কাল কি্বয়ামতে আমাকে জবাব দিতে হবে আল্লাহর দরবারে ৷    
তাই আর দেরী না করে সর্ব প্রকার অন্যায়, অত্যাচার, ব্যাভিচার, ইভটিজিং, দুর্নীতি ইত্যাদি থেকে তাওবা করি৷ ইয়া আল্লাহ! আমাদের কে তাওফিক দান করম্নন৷  আমীন৷

আব্দুস সালাম সুনামগঞ্জী
লেখক , কলামিষ্ঠ, গ্রন্থকার৷
শিক্ষক
জামেয়া মাদানিয়া ইসলামীয়া কাজিরবাজার, সিলেট
Your Ad Here

0 comments:

Post a Comment