গান-বাজনা ও হারাম জিনিসের আয়োজন ব্যতীত মীলাদুন্নবী উদযাপন

Posted Posted by আরিফ in Comments 0 comments


শাখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
﴿ حكم الاحتفال بذكرى مولد الرسول صلى الله عليه وسلم من غير غناء ولا محرمات ﴾
« باللغة البنغالية  »
الشيخ محمد صالح المنجد
ترجمة: ثناء الله نذير أحمد
مراجعة: د. أبو بكر محمد زكريا
প্রশ্ন :
আমরা স্পাহানবাসী, আমরা সভা সমাবেশকে একতা, ভ্রাতৃত্ব বন্ধন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি, দ্বীনের প্রতি তাদের গর্ব ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি এবং আমাদের প্রজন্মের চরিত্র ও আচরণের উপর প্রভাব সৃষ্টিকারী বিধর্মীদের মনগড়া উৎসব যেমন ভালবাসা দিবস ইত্যাদি থেকে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে আমরা ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করি, এ কাজ কি বৈধ ?


উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ
প্রথমত :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতবিরোধ রয়েছে, তবে এ ব্যাপারে তারা একমত যে, হিজরির এগারতম বছর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়েছে ! বর্তমান যুগে এ মৃত্যু দিবসেই কিছু লোক মাহফিলের আয়োজন করে ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করছে

দ্বিতীয়ত :
ইসলামি শরী‘আতে ঈদে মীলাদুন্নবী নামে কোন অনুষ্ঠান নেই সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ ও কোন ইমাম এ জাতীয় ঈদের সাথে পরিচিত ছিলেন না, এসব অনুষ্ঠান পালন করা তো পরের কথা মূর্খ বাতেনী গ্রুপের কতক লোক এ ঈদের সূচনা করলে কতিপয় শহরের লোকেরা এ বিদআতের দিকে ধাবিত হয়

তৃতীয়ত :
সুন্নতের কতক সত্যিকার ভক্ত নিজ দেশের এসব অনুষ্ঠান দেখে প্রভাবিত হয়, তারা এসব বিদআত থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য পরিবার নিয়ে জমায়েত হয়, বিশেষ খাবারের আয়োজন করে এবং সবাই মিলে খায় একই উদ্দেশ্যে কেউ বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের একত্র করে, কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত আলোচনা অথবা দীনি বক্তৃতা উপস্থাপনের জন্য লোকদের একত্র করে
সন্দেহ নেই এর উদ্দেশ্য আপনাদের ভাল, যেমন পরস্পরের মাঝে ঐক্য তৈরি, অমুসলিম প্রদান ও কুফরি দেশে ইসলামি মূল্যবোধ সৃষ্টি করা ইত্যাদি
তবে বাস্তবতা হচ্ছে : আপনাদের এসব ভাল উদ্দেশ্য কোন অনুষ্ঠানকে বৈধতার সনদ দেয় না, বরং এসব ঘৃণিত বিদআতআপনাদের ঈদের প্রয়োজন হলে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাই যথেষ্ট, আরও ঈদের প্রয়োজন হলে আমাদের সাপ্তাহিক ঈদ জুমার দিন পালন করুন, এতে আপনারা জুমার সালাত ও দ্বীনের মূল্যবোধ তৈরির জন্য একত্র হোনএটা সম্ভব না হলে এসব বিদআতী অনুষ্ঠান ব্যতীত বছরের আরও অনেক দিন রয়েছে, সেখানে বিভিন্ন বৈধ উপলক্ষে একত্র হতে পারেন, যেমন বিয়ের অনুষ্ঠান অথবা ওলিমার দাওয়াত অথবা আকিকা অথবা বিশেষ উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ইত্যাদিএসব অনুষ্ঠানকে আপনারা পরস্পর সম্প্রতি সৃষ্টি, একতার বন্ধন তৈরি ও দ্বীনের মূল্যবোধ জাগ্রত করার ন্যায় ইত্যাদি সৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারেন

নিম্নে ভাল নিয়তে বিদআতি অনুষ্ঠানে যোগদান সম্পর্কে আলেমদের ফতোয়া উল্লেখ করছি :
এক. ইমাম আবু হাফস তাজুদ্দিন আল-ফাকেহানি -রাহিমাহুল্লাহ- মীলাদের বিভিন্ন প্রকার সম্পর্কে বলেন : কোন ব্যক্তির নিজ অর্থায়নে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও সন্তানদের জন্য মাহফিলের আয়োজন করা, শুধু পানাহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা এবং পাপের কোন সুযোগ না রাখা, এসব অনুষ্ঠানকেই আমরা বিদআত, ঘৃণিত ও মাকরুহ বলছি, কারণ এ ধরণের অনুষ্ঠান আমাদের কোন মনীষী করেননি, যারা ছিল ইসলামের পণ্ডিত, যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম, যুগের আলোকবর্তিকা ও জগতবাসীর উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখুন : আল-মাওয়ারেদ ফি আমালিল মাওলিদ পৃষ্ঠা : (৫)

দুই. ইবনুল হাজ আল-মালেকি -রাহিমাহুল্লাহ- গান-বাজনা ও নারী-পুরুষের সহবস্থান মুক্ত ঈদে মীলাদুন্নবী সম্পর্কে বলেন : ঈদে মীলাদুন্নবী যদি এসব পাপাচার মুক্ত শুধু খানার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে উদযাপন করা হয় এবং তাতে বন্ধু-বান্ধবদের আহ্বান করা হয় : তাহলে শুধু নিয়তের কারণে এ অনুষ্ঠান বিদআত হিসেবে গণ্য হবে, কারণ এটা দ্বীনের মধ্যে সংযোজনের শামিল, পূর্বসূরিদের আমল বিরোধী এবং তাদের নিয়ত ও কর্মের খেলাফআমাদের তুলনায় তাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য, সম্মান ও মহব্বত বেশী ছিলদ্বীনি বিষয়ে তারা ছিলেন আমাদের চেয়ে অগ্রগামীতাদের কেউ মীলাদের নিয়ত করেননিআমরা তাদের অনুসারী, অতএব তাদের জন্য যা যথেষ্ট, আমাদের জন্যও তাই যথেষ্টমৌলিক ও পূর্বাপর সকল বিষয়েই তারা আমাদের আদর্শ ও পথিকৃৎইমাম আবু তালেব আল-মাক্কী -রাহিমাহুল্লাহ- তার কিতাবে অনুরূপই বলেছেন দেখুন : আল-মাদখাল : (২/১০)
তিনি আরও বলেন : কেউ কেউ এসব হারাম গান-বাদ্যের পরিবর্তে বুখারি খতম দ্বারা ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করেসন্দেহ নেই হাদিসের দরস ইবাদাত ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম, এতে রয়েছে বরকত ও কল্যাণ, কিন্তু এসব হাসিল করার জন্য শরী‘আত অনুমোদিত পন্থা অবলম্বন করা জরুরী, মীলাদের উদ্দেশ্যে তা পাঠ করা নয়, যেমন সালাত আল্লাহর বিশেষ ইবাদাত, তবুও অসময়ে এ সালাত পড়া নিন্দনীয়, সালাতের এ অবস্থা হলে অন্যান্য ইবাদাতের অবস্থা কি হবে ?! দেখুন : আল-মাদখাল : (২/২৫)

মোদ্দাকথা : এসব মৌসুমে আপনাদের উল্লেখিত সৎ উদ্দেশ্যে যেমন পরস্পর একতা তৈরি, উপদেশ ও নসিহত প্রদান ইত্যাদি নিয়তে জমা হওয়া বৈধ নয়, বরং এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য অন্য কোন উপলক্ষ বেছে নিন, পুরো বছরের যে কোন একটি দিন নির্ধারণ করুনদোয়া করছি আল্লাহ আপনাদের কল্যাণের চেষ্টা করার তাওফিক দান করুন এবং আপনাদের হিদায়াত ও তাওফিক বৃদ্ধি করুনআল্লাহ ভাল জানেন

সমাপ্ত


0 comments:

Post a Comment