চুরি, ডাকাতি, জবরদখল ও ছিনতাই

Posted Posted by আরিফ in Comments 0 comments

আব্দুস সালাম সুনামগঞ্জী

কারো সংরতি মাল তার অজ্ঞাতে চুপিসারে নিয়ে যাওয়াকে চুরি বলা হয়। আর অন্যায়ভাবে কারো সম্পদের উপর জবরদখল বা আধিপত্য কায়েম করাকে বলা হয় ডাকাতি। কারো জমি, বাড়ি অবৈধভাবে দখল করাকে জবরদখল বলে। রাস্তাঘাট থেকে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা পয়সা আসবাবপত্র ছিনিয়ে নেয়াকে ছিনতাই বলে। উক্ত পন্থায় মাল-সম্পদ উপার্জন করাকে আল্লাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন। ইরশাদ করেন 'হে মুমিনগণ! তোমরা একে অন্যের মাল অবৈধ পন্থায় গ্রাস করো না। (বাকারা-১৮৮)
উক্ত আয়াতের অর্থের ব্যাপকতার মাঝে চুরি, ডাকাতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ও অন্তর্ভুক্ত। কেননা এ সকল পন্থায় ও অন্যের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও চুরি ও ডাকাতি প্রতিরোধে ইসলাম যে কঠোর শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে তা থেকেও বুঝা যায় যে, এ পন্থায় সম্পদ উপার্জন কিছুতেই বৈধ হবে না। কেননা বৈধ হলে এমন কঠিন শাস্তির বিধান কখনই দেয়া হতনা। চুরির শাস্তি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে 'চোর ও চোরনীর হাত কর্তন করে দাও। (সূরা মায়েদা-৩৮) ডাকাতির শাস্তি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে '' আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ভূ-পৃষ্টে ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় (ছিনতাই, হাইজেক, ডাকাতি করে) তাদের শাস্তি এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে, অথবা শুলে চড়ানো হবে। অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিস্কার করা হবে। (সূরা মায়েদাহ-৩৩)
চুরি ডাকাতি জবরদখল ইত্যাদি পন্থায় অন্যের মাল আত্মসাৎ করা যে বৈধ নয় এ সম্পর্কে হাদীসেও সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। এক হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোন মুসলমান ব্যক্তির মাল-সম্পদ তার স্বত:স্ফূর্ত সন্তুষ্টি ছাড়া কারো জন্য বৈধ হবে না। (ইবনে হিব্বান, আবু ইসহাক) অন্যত্র ইরশাদ করেন ''তোমাদের পরস্পরের জান ও মাল অপরের জন্য হারাম। (বুখারী ও আহমদ)
হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কারো এক বিগতজমিন (জমি-জায়গা) জোরপূর্বক (অন্যায়ভাবে) দখল করবে, কেয়ামতের দিন সাত তবক (সাত স্তর বিশিষ্ট) জমিন থেকে ঐ অংশটুকু তার গলায় বেড়িরূপে পরিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম) অন্যত্র ইরশাদ করেন ''যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো কিছু জমি নিবে কেয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিন পর্যন্ত ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী, মিশকাত-২৫৬) অন্যত্র রাসূল সা. ইরশাদ করেন। ''যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমিন দখল করবে তাকে ইহার মাটি (মাথায় করে) হাশরের মাঠে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হবে। (মিশকাত-২৫৬)
অন্যায়ভাবে অন্যের জমি জায়গা দখল ও ভোগ দখলের তিন প্রকার শাস্তি বা পরিণতির কথা বলা হয়েছে। (১) দখলকৃত জমি দখলদারীর গলায় বেড়িরূপে পরিয়ে দেয়া হবে (২) ঐ জমিতেই তাকে পুতে ফেলা হবে। (৩) অথবা জমির মাটি মাথায় নিয়ে হাশরে উপস্থিত হবে। এ তিন প্রকার শাস্তি একজনকেই দেয়া হতে পারে অথবা এক এক শাস্তি পৃথক পৃথক ব্যক্তিকে দেয়া হতে পারে।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস সমূহের আলোকে চুরি, ডাকাতি ও জবরদখলের মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ যে অবৈধ হবে, তা সুস্পষ্টভাবেই বুঝা যায়। এসকল পন্থায় উপার্জন পৃথিবীর কোন ধর্ম দর্শনেই বৈধ রাখা হয়নি। তাই আসুন! এসব অপরাধ ত্যাগ করি, তওবা করি।

অবৈধ উপার্জন:
পবিত্র কুরআন চিরন্তন সত্য, পবিত্র কুরআন সমগ্র মানবজাতির কল্যানের আহবায়ক। তাই পবিত্র কুরআন সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করছে। অন্যায়ভাবে কারো অর্থ সম্পদ আত্মসাত করোনা।
আল্লামা শিব্বির আহমদ ওসমানী (রহ.) এর তাফসীরে লিখেছেন এর কয়েকটি ব্যাখ্যা হতে পারে অর্থাৎ (১) কারো ধন সম্পদের খবর কোন অত্যাচারী শাসনকর্তাকে না দেওয়া (২) উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে বিচারকের নিজের প অবলম্বনে রাজী করা এবং অন্যের ধন সম্পদ আত্মসাৎ করার হীন চেষ্টা করা, (৩) এমনিভাবে মিথ্যা সারে মাধ্যমে (৪) মিথ্যা শপথ করে (৫) মিথ্যা মামলা রুজু করে, জেনে-শুনে অন্যের ধন-সম্পদ গ্রাস করতে স্বচেষ্ট হওয়া এসবই অন্যায়, অবৈধ। তাই পবিত্র কুরআন এই সমস্ত অবৈধ পন্থায় রুজী-রোজগার, আহরণ থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে অত্যন্ত কঠোর ভাষায়। (ফাওয়ায়েদে উসমানী)
এক কথায় মানুষের জন্যে তিকর ও অকল্যাণকর যত পন্থা রয়েছে সবই পবিত্র কুরআন অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। যেমন ঘুষখোরি, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারণা, ছল-চাতুরি, পরিমাপে কম দেয়া, কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারলব্দ অর্থ, মদ ও মূর্তির ব্যবসা, সুদের ব্যবসা, জুয়ার মাধ্যমে, গান বাদ্যের পারিশ্রমিক, ভেজাল দ্রব্যের বিক্রয় অবৈধ ও হারাম ঘোষণা করেছে ইসলাম। কেননা, এসব পন্থা মানুষের জন্য তিকর, মানবতার জন্য অবমাননাকর।
প্রিয় পাঠকমণ্ডলী! আসুন! আমরা সর্বপ্রকার হারাম খাদ্য, হারাম ও অবৈধ উপার্জন বর্জন করি। নিজে বিরত থাকি অন্যজনকেও বিরত রাখি। দুর্নীতি ও অন্যায় কাজ সামাজিকভাবে বর্জন করার চেষ্টা করি। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার চেষ্টা করি।

লেখক: গ্রন্থকার
শিক, জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার, সিলেট



0 comments:

Post a Comment